
অনলাইন ডেস্ক : খুব সহজেই ফেসবুক মাধ্যম ব্যবহার করে উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব।অনেকেই ফেসবুকে পেজ খুলে নিজের ব্যবসা গোছাতে পেরেছেন।তাই বলে ফেসবুকে পেজ খুললেই সফল হবেন ব্যাপারটা মোটেও এমন নয়।পেজ খুলে কাঙ্ক্ষিত অডিয়েন্স না পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগের অভাব নেই।অনেকে বলেন,অমুক আমার মতোই একটি পেজ খুলে প্রচুর অডিয়েন্স পাচ্ছে।কিন্তু আমার পেজে পাচ্ছে না কেন?অনেকে হতাশ হয়ে ফেসবুকে বুস্ট করে থাকেন।তাতে ওই পোস্ট হয়তো জনপ্রিয়তা পায় কিন্তু আপনার পেজ পাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত অডিয়েন্স।
ফেসবুক পেজ খোলার আগে-পরে মূলত জরুরি সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়ন।ফেসবুক পেজে লাইক-ফলোয়ার বাড়াতে ধৈর্য্যের পাশাপাশি মনোযোগ দেওয়ার বাড়তি গুরুত্ব আছে।সেগুলো কি?এ নিয়ে রইলো আমাদের কিছু টিপস।আশা করা যায় আপনিও সহজে ফেসবুক পেজ জনপ্রিয় করে তুলতে পারবেন একটু মনোযোগ দিলে।
আপনি প্রোফাইল গুছাতে বাড়তি মনোযোগ দিন : ফেসবুক পেজ খুলে অনেকেই শুধু প্রোডাক্ট এর পোস্ট আপলোড করতে শুরু করেন।এমনটা করা উচিত নয়।ফেসবুক পেজ খোলার আগেই প্রোফাইল গোছানোর পরিকল্পনা ঠিক করে নিতে হবে।এক্ষেত্রে একটি ভালো নাম নির্বাচন এবং সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) এর সঙ্গে সঙ্গতি রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।এমনকি ফেসবুক পেজের ইউআরএল যথাসম্ভব সাধাসিধে রাখুন।প্রোফাইলের কাভার ফটো,লোগো এসব আকর্ষণীয় এবং যথাসম্ভব সাধাসিধে রেখে প্রথমে সাজান।প্রোডাক্ট আপলোড করবেন পরে।এসবকিছু করার পর পেজের ডেসক্রিপশন,স্লোগান,ঠিকানা,খোলা থাকার সময়,ওয়েবসাইট (যদি থাকে),ফোন নম্বর,লোকেশন এসবকিছু সুন্দরভাবে লিখে নিন।এইভাবে প্রফেশনাল দেখাবে আপনার পেজ।
আপনি অন্য পেজ ফলো করুন : ঠিকভাবে অনেকেই এই বিষয়টি বুঝতে পারেন না।অনেকে অন্য ফেসবুক পেজে নিজের পেজের লিংক কিংবা পেজ ফলো করার অনুরোধ জানিয়ে কমেন্ট করেন।এই ধরণের কাজকে বলা হয় স্প্যামিং।এমনটা করলে আপনার পেজকে রিপোর্ট করা হতে পারে।এমনকি মানুষ আপনার পেজকে ফলো করতেও রাজি হবে না।তাই আপনার পেজ থেকে আপনার প্রতিযোগী পেজে গঠনমূলক কমেন্ট করুন।এমন পোস্টে কমেন্ট করুন যে কমেন্ট স্প্যামিং হিসেবে মনে হবে না।এভাবে পেজের ইম্প্রেশন ভালো হয় এবং অর্গানিক ফলোয়ার আসে।
আপনি ভিজুয়াল মিডিয়ার সাহায্য নিন : একটি বিষয় হয়তো খেয়াল করেছেন,বিগত কয়েক বছরের আপডেটে বেশ পরিবর্তন এসেছে।ফেসবুক এখন স্ক্রলিং ফিচার উন্নত করতে ব্যাপক কাজ করছে।এই স্ক্রলিং এর কারণে এখন মানুষের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য ভিজুয়াল মিডিয়ার সাহায্য নিতেই হয়। কিন্তু অনেকেই শুধু পণ্যের যেমন তেমন ছবি দিয়েই সন্তুষ্ট থাকেন।আবার অনেকে গুগল থেকে ছবি নামিয়ে আপলোড করে দেন।এমনটা করা উচিত নয়। আপনাকে প্রোডাক্টের জন্য একটি কাঠামো বানিয়ে নিতে হবে।প্রয়োজনে ভিডিও বানাবেন।এজন্যে আপনার এডিটিং দক্ষতা অর্জন করতে হবে।অথবা কাউকে নিয়োগ দিতে পারেন।মনে রাখতে হবে,ফলোয়ার বাড়াতে পারবেন না নিজের একটি অনন্য পরিচয় নির্মাণ না করতে পারলে।
আপনি ফেসবুক পেজের প্রচারণার জন্য গ্রুপ বানান : আপনি হয়তো খেয়াল করেছেন করোনা মহামারির সময়,অনেক ফেসবুক পেজ ভোক্তাদের অভিযোগ সংগ্রহ এবং সমস্যা সমাধানের জন্য গ্রুপ খুলে নিয়েছিল।এভাবে আপনার পেজে মেসেজ কিংবা অভিযোগ গ্রহণের বাড়তি চাপ কমে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা,আপনার নিয়মিত গ্রাহকরা আপনার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার সুযোগ পাবে।এভাবে আপনার নিয়মিত যোগাযোগ সহজেই আপনার পেজে ফলোয়ার বাড়াবে।আপনার নিয়মিত গ্রাহকরাই আপনার পেজের কথা অন্যদের বলবে।পেজে অর্গানিক লাইকও বাড়ে গ্রুপের কারণে।
আপনি লাইভে অংশগ্রহণ করুন : ভিডিও কিংবা পোস্টের সমন্বয়ে ফেসবুক লাইভে পেজ আরও বেশি ছড়াতে পারে।পেজের প্রোমোশনের সুযোগ এলেই লাইভ করুন।তবে শুধু প্রোমোশনই নয়,বিভিন্ন সময় অভিযোগ সংগ্রহের জন্যেও লাইভ করা যেতে পারে।অনেক সময় পেজে টিউটোরিয়াল করে দেখাতে পারেন।সেই ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করে পেজের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারেন।এভাবে আপনি ব্যবসার পাশাপাশি আয় করতে পারবেন গুগল থেকেও।
আপনার পোস্ট কিংবা ডেসক্রিপশন লেখায় দক্ষ হতে হবে : দক্ষ হতে হবে ফেসবুকে কন্টেন্ট কিংবা পোস্ট লেখার ক্ষেত্রে।আজকাল কন্টেন্ট লেখা অনলাইন মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ।ফেসবুক অ্যালগরিদম যেন আপনার লেখাটিকে রিচ বাড়িয়ে দেয় সেজন্যে ঠিকঠাক অপটিমাইজ করতে হয়।আজকাল গুগলে কিংবা ইউটিউবে এ বিষয়ে অনেক তথ্য খুঁজে পাবেন।লেখা কিংবা পোস্ট ভালোভাবে সাজিয়েও মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়।অল্প শব্দে বেশি তথ্য দিয়ে পোস্ট লেখার চেষ্টা করুন।যত্নশীল হতে হবে পোস্টের মাপ নির্ধারণে।
পেজে ভুল তথ্য ভুলেও নয় : আপনি আপনার পেজে এনগেজমেন্ট বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভুল তথ্য কিংবা মিথ্যে প্রোমোশন করবেন না।ভোক্তারা কোনোভাবে যেন অসন্তুষ্ট না হয়।ভুল তথ্যের ব্যাপারে ফেসবুক এখন কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়।তাই পেজে রিপোর্ট এলেই আপনার পেজটি খোয়া যেতে পারে।শুধু রিপোর্টই নয়,ফেসবুকে কোনো ভোক্তা যেন আপনার পোস্ট কিংবা সার্ভিস নিয়ে বাজে মন্তব্য বাঃ মতামত প্রকাশ না করতে পারে সতর্ক থাকতে হবে সে বিষয়ে।
পোস্ট করার সময় : আপনার পেজ সবসময় একটিভ রাখতে হবে।ফেসবুক এমনভাবে বানানো যেখানে মানুষ সবকিছুই দ্রুত করতে চায়।পেজের ক্ষেত্রেও মানুষ পেজে মেসেজ দেওয়া মাত্র প্রত্যুত্তর আশা করে।সেজন্য ফেসবুকে ইনস্ট্যান্ট রিপ্লাইয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে।সেন্ড ইনস্ট্যান্ট রিপ্লাইস সিলেক্ট করে রাখুন।সেখানে আপনি একটি বার্তা লিখুন।আপনার গ্রাহক বিবেচনা করে বার্তাটি লিখুন।সেই লেখাটি এমনভাবে লিখবেন যাতে গ্রাহক আপনার মেসেজ দেরিতে পেলেও সন্তুষ্ট থাকেন এবং আপনার সেবা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক থাকেন।
ফেসবুক পিক্সেলের ব্যবহার করুন : ফেসবুক পিক্সেল আইটি কিংবা টেক সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে ব্যবহার করতে পারেন।তবে আপনার ব্যবসার ওয়েবসাইট থাকলে এই অপশন ব্যবহার করতে পারেন।পিক্সেল মূলত একটি ছোট কোড।এই কোডের মাধ্যমে ফেসবুকে ভিজিট করা গ্রাহকদের তথ্য আপনার ওয়েবসাইট সহজে পেয়ে যাবে।সেই তথ্য দিয়ে গ্রহণ করতে পারবেন টার্গেট অডিয়েন্স সম্পর্কে পরিকল্পনা।
বেশি বেশি বুস্টের বাতিক পরিহার করুন : অনেকে একটি ভুল করেন ফেসবুকে পেজ খুলেই।অনেকে মনে করেন বুস্ট করলেই পেজের রিচ বাড়ে।বাস্তবে বিষয়টি মোটেও এমন নয়।ফেসবুকে পোস্ট তখন বুস্ট করবেন যখন কোনো পণ্য বাঃ সেবা দ্রুত আপনি বিক্রি করতে চাচ্ছেন বা দ্রুত সময়ে ছড়াতে চাচ্ছেন।কিন্তু টাকা অপচয় করা ঠিক না বারবার বুস্টের মাধ্যমে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন : আজকাল এসইও কিংবা অপটিমাইজেশনের জন্য কিছু সার্ভিস চালু হয়েছে।আপনার ব্যবসা যখন আস্তে আস্তে বড় হতে শুরু করবে,তখন এসব টেকনিক্যাল বিষয়ে মনোযোগ বাড়াতে হবে।সেজন্যেই একজন টেকনিক্যাল কনস্যাল্টেন্টের শরণাপন্ন হোন।একই সঙ্গে এ বিষয়ে নিজেরও জানাশোনার পরিধি বাড়ান।
নিজের একটি টিম গুছিয়ে নিন : শুধু অব্যবস্থাপনার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক নামি ফেসবুক ব্রান্ড।তাই পেজ গোছানোর ছয় মাস পর্যন্ত নিজের সক্ষমতা বুঝে একটি টিম গঠন করুন।এইভাবে আপনার ফেসবুক ব্যবস্থাপনা এবং একটিভ রাখা সহজ হবে।
ফেসবুক পেজ সফল করার জন্যে শুধু পোস্ট করলে কিংবা অনেক পণ্য থাকলেই হয় না।মনে রাখতে হবে,পণ্য গোছানোর পাশাপাশি নিজের পেজকেও ব্রান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হয়।এই কাজটি এত সহজ না।এজন্য সঠিক পরিকল্পনা যেমন জরুরী তেমনই টেকনিক্যাল বিষয়ে নিজের জানাশোনাও বাড়াতে হয়।সময়টা কঠিন।এখন প্রচুর ফেসবুক পেজ আসছে।আর এই সময়ে ধীরে ধীরে হাটার সুযোগ নেই।দক্ষতার সঙ্গে নিখুঁতভাবে কাজ পরিচালনা করতে হবে।তবেই আপনি ফেসবুকে আত্মপ্রকাশ করতে পারবেন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে।ছবি-তথ্য সংগৃহীত