
সংবাদদাতা: আলিফ হোসেন-তানোর-রাজশাহী।
অনলাইন ডেস্ক : রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী মোহনপুর উপজেলার ঘাষিগ্রাম ইউনিয়নের (ইউপি) বড়াল মাঠে চার ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনির অবৈধ ইটভাটা।
উপজেলার সিংহভাগ মানুষ কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত আছে। এখানে মাছ,পান ও আলুর ব্যাপক সুনাম রয়েছে দেশ-বিদেশেও সুখ্যাতি রয়েছে।প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের ওপর নির্ভর করেই এসব মানুষকে তাদের সংসার চালাতে হয়।এক কথায় বলতে গেলে কৃষিনির্ভর অর্থনৈতিক অঞ্চল এটি।
ভালো মাটি ও সুন্দর জলবায়ুর কারণে ফসলের সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়।কিন্ত অবৈধ ইটভাটার কারণে এখানে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশের। এছাড়াও ভাটার গর্ভে চলে যাচেছ কৃষিজমির টপ সয়েল (উপরিভাগের মাটি) ।কয়লার বদলে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।আর ইট তৈরির মৌসুমকে ঘিরে ভাটাগুলোতে মজুদ করা হয়েছে ফসলী জমির মাটি ও খড়ি।এতে এলাকার কৃষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।ইট ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও গরম বাতাসে ফসরহানিসহ পরিবেশ দুষিত হয়ে জনজীবন দুর্বীসহ হয়ে পড়েছে।
একাধিক সূত্র জানায়,প্রতিবছর অবৈধ এই ভাটাতে প্রায় শত বিঘা ফসলি জমির টপ সয়েল পোড়ানো হয়।ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত ১৯৯২ সালের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে কৃষি-জমিতে ইটভাটা নির্মাণ দণ্ডনীয় অপরাধ ও ইট প্রস্তুত এবং ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন,২০১৩,কৃষি জমিতে ভাটা স্থাপন সম্পুর্ন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়,বড়াল মাঠে চার ফসলি জমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠা মেসার্স এএমএসএস ইট ভাটায় ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিশাল মজুদ করা হয়েছে।ভাটাতে জ্বালানী হিসেবে কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।অথচ সরকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন,২০১৩ প্রণয়ন করে।কিন্ত আইন রয়েছে আইনের জায়গায়,বাস্তবে নেই কোনো প্রয়োগ।ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভাঁটা মালিক।কোনরকম অনুমোদন ছাড়াই ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে এই ইট ভাটা।এলাকার কৃষিজমির টপ সয়েল দিয়েই তৈরি হচ্ছে ফাঁপা ও ছিদ্রবিহীন ইট।কালো ধোঁয়ায় এলাকা আচ্ছন্ন করে তৈরি করা হয় ইট।আর গ্রামীণ সড়ক ব্যাবহার করে পরিবহন করা হয় ইট ও ইট তৈরীর মাটি।
বেলনা কারিগরি কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন,আজিজুল হাজির অবৈধ ইট ভাটার কারণে মাঠে ফসলহানিসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
কৃষক বাবলু,রহিম ও জামাল বলেন,এই ইট ভাটার কারনে তারা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।ভাটার কালো ধোঁয়া ও গরম বাতাসে জমির ফসলহানি হচ্ছে,তারা দ্রুত অবৈধ ভাটা অপসারণ করার দাবি করেছেন।বিগত ২০১৩ সালের আইনে কৃষি জমিতে ভাটা স্থাপনের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স দিতে পারবে না।
আইনে আরও উল্লেখ রয়েছে ইটে অবশ্যই হ্যালো ফ্লাক্স থাকতে হবে।জ্বালানি হিসেবে কাঠ,বাঁশের মোথা ও খেজুর গাছের গুড়ি ব্যবহার করা যাবে না।খাল,নদী,পতিত জমি ব্যতীত ফসলী জমির মাটি ব্যবহার করা যাবে না-এমনকি অতিরিক্ত সালফার, অ্যাশ,মারকারি বা অনুরূপ উপাদান সম্বলিত কয়লা ব্যবহার করা যাবে না ইত্যাদি আরো অনেক নিয়ম রয়েছে যা পরিবেশ রক্ষার জন্যই করা হয়েছে।এসব অবৈধ ইটভাটার কারণে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পরিবেশ।আশেপাশের জমিগুলো অনুর্বর করে তুলেছে, অল্পতে শুকিয়ে যাচ্ছে জমির পানি।অবৈধ ট্রাক্টঁর,ট্রলি ও নছিমন-করিমনে মাটি ও ইট পরিবহন করায় গ্রামীণ সড়কগুলো প্রায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষসহ কৃষকেরা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স এএমএসএস ইট ভাটার স্বত্ত্বাধিকারী আলহাজ্ব আজিজুল হক বলেন,সারাদেশে যেভাবে ইট ভাটা চলে তিনিও সেভাবে চালাচ্ছেন।তিনি বলেন,তারা প্রতিবছর প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা ভ্যাট দেন,অবৈধ হলে তাদের টাকা নেয়া হচ্ছে কেনো।তিনি বলেন,সরকার যদি ভাটা বন্ধ করে দেন তাহলে তারা বন্ধ করে দিবেন।
এবিষয়ে মোহনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন,অধিকাংশ কৃষিজমিতে ভাটা স্থাপন করেন কোনরকম অনুমতি ব্যতীত।এসব ভাটা কারণে কৃষিতে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।এর আশেপাশে ও কয়েক কিলোমিটার ভিতরে থাকা ফসলগুলো কখানো কখানো দশ থেকে একশ শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়।অত্র এলাকায় আমের গাছে মুকুল আসবে না মুকুল আসলেও গুটি অবস্থায় আম ঝরে যাবে।
এ বিষয়ে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান,কৃষকেদের উন্নয়ন দ্বারাই দেশের আরও উন্নয়ন ঘটবে।দ্রুত কৃষি জমিতে অবৈধ ইট ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে আইন আনুক ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।তিনি বলেন,তিনি রাজশাহী মিটিংয়ে আছেন, আগামিকাল বড়াল মাঠের ইট ভাটায় অভিযান দেয়া হবে।