সংবাদদাতা: মোঃ সাইফুল ইসলাম রায়হান,চারঘাট রাজশাহী।
অনলাইন ডেস্ক: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দবাউসায় আম চাষিদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে শাবুকখোল অতিথি পাখির দায়িত্ব নিলো ৱ্যাব-৫। বুধবার দুপুরে রাজশাহীর ৱ্যাব-৫ এর বিপিএম এডিশনাল ডিআইজি মাহ্ফুজুর রহমান এলাকা পরিদর্শন শেষে আম চাষিদের সাথে মতবিনিময় করে এ পাখির দায়িত্ব নিয়েছেন।
এ সময় রাজশাহীর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে পাখি মারা দন্ডনীয় অপরাধ বিষয়ক লিফলেট বিতরণ করা হয়। এদিকে পরিস্কারের অজুহাতে বাগান মালিকরা পাখির বাসা ভেঙ্গে দেয়ার ঘটনায় শতাধিক পাখি মারা যায় বলে জানান স্থানীয় কতিপয় লোকজন।
তবে পাখির বাসা ভাঙা যাবে না মর্মে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে ওই এলাকা কেন অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেন।
জানা যায়, ৱ্যাবের মহাপরিচালকের নির্দেশে রাজশাহী ৱ্যাব-৫ এর এডিশনাল ডিআইজি মাহ্ফুজুর রহমান বিপিএম বুধবার বেলা ১২টার দিকে শাবুকখোল অতিথি পাখির অভয়াশ্রম এলাকা বাঘা উপজেলার খোদ্দে বাউসা গ্রাম পরিদর্শন করেন। এ সময় আম বাগান মালিকরা তাঁর কাছে ক্ষতির বিষয়ে তুলে ধরেন। তিনি বিভিন্ন স্থানে কথা বলে ৪৫টি আম গাছের ক্ষতি পূরণ দিয়ে পাখির দায়িত্ব নেন।
এ বিষয়ে বাগান মালিক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আমার বড় বড় ২৫টি আম গাছ দুই বছরের জন্য ৭ লক্ষ টাকার বিনিময়ে আতিকুর রহমান নামের এক ব্যক্তির কাছে লিজ প্রদান করেছি। তার কিছু দিন পর পাখি বাসা তৈরী করে বাগানে আশ্রয় নিয়েছে। ফলে গতবার একটি আমও গাছে ধরেনি। এখন লিজকৃত ব্যক্তি টাকা ফেরত চান। এ ঘটনায় আমি নিরুপায় হয়ে পড়ি এবং লিজকৃত বাগান মালিককে এ বছর আম ধরে-কিনা দেখার জন্য অনুরোধ করি।
এক পর্যায় মঙ্গলবার লিজকৃত বাগান মালিক লেবার নিয়ে গাছ পরিস্কার করতে আসে। এ সময় স্থানীয় কিছু ব্যক্তিরা ১৫ দিন পর বাগান পরিস্কার করার জন্য অনুরোধ করে চলে যায়। সর্বশেষ ৩০ অক্টোবর বুধবার ৱ্যাবের কর্তৃপক্ষ এসে আমাদের সাথে মতবিনিময় করে বাগানের ক্ষতি পূরণ দিয়ে পাখির দায়িত্ব নেন।
অপর এক বাগান মালিক ছানার হোসেন বলেন, আমার ৫টি ফজলি আমের গাছ রয়েছে। এ গাছগুলো পাখি বাসা তৈরী করে আশ্রয় নিয়েছে। গত ৪ বছর থেকে কোন আম ধরছে না। এ বাগান আমি দুই বছরের জন্য ৫০ হাজার টাকায় লিজ দিয়েছি। আম না ধরায় টাকা ফেরত চাচ্ছে। আমি লিজকৃত ব্যক্তির কাছে থেকে টাকা নিয়ে খরচ করেছি। তাকে টাকা কি করে ফেরত দিব। আমি দুস্তিন্তায় পড়েছি। এছাড়া শফিকুল ইসলামের আরো বড় বড় ১০টি গাছে পাখি বাসা বেধেছে। এ গাছগুলোতেও আম ধরছে না বলে তিনি জানান।
স্থানীয় পাখিপ্রেমি রফিকুল ইসলাম বলেন, বন অধিদপ্তর থেকে একটি সাইনবোর্ড দেয়া হয়েছে বাগানের পাশে। সাইন বোর্ডে বন্য প্রাণী হত্যার দায়ে সর্বোচ্চ ১২-১৫ বছরের শাস্তির কথা লেখা থাকলেও অনেকে এর তোয়াক্কা না করে পাখি নিধন করছে। পাখি সংরক্ষণের জন্য বন অধিদপ্তরে লোকজনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া জায়না। তবে আম গাছ পরিস্কার করার নামে কিছু পাখির বাসা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। আমি জানতে পেরে বাগান মালিককে আর ১৫ দিন পর বাগান পরিস্কার করার অনুরোধ করলে তারা চলে যান। বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে রাজশাহী ৱ্যাব ৫ কে অবগত করলে তাঁরা এলাকায় এসে ক্ষতি পূরণ দিয়োর সর্তে পাখির দায়িত্ব নেন।
খর্দ্দোবাউসার পাখির অভয়াশ্রম এলাকা পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী র্যাব-৫ এর সিনিয়র পুলিশ সুপার এনামুল হক, বাঘা থানার ওসি নজরুল ইসলাম, রাজশাহী বন অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ অফিসার দেবাশীষ দে, ফরেস্টার আশরাপুল ইসলাম।
রাজশাহীর ৱ্যাব-৫ এর বিপিএম এডিশনাল ডিআইজি মাহ্ফুজুর রহমান স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ৱ্যাবের মহাপরিচালকের নির্দেশে আমি এখানে এসেছি। বাগান মালিকদের সাথে কথা বলে ক্ষতিগ্রস্থ গাছের তালিকা করে তার মূল্য নির্ধারণ করে বাগান মালিক, আম ব্যবসায়ীদের সাথে চুক্তি করে ৱ্যাবের পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হবে। তিনি বলেন, এখন থেকে পাখির অভয়াশ্রম ধরে রাখতে এবং অতিথি পাখি শিকার বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়া অতিথি পাখি নিধনের খবর পেলে তাৎক্ষণিক অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।